মুনসুর রহমান :

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়ে কাজকে আপনে ভেবে যিনি কম্পিউটারে বাংলা ভাষার প্রয়োগ, প্রচলন ও বিকাশের যুগান্তকারী বিপ্লব সাধন করা, শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা ও কর্মসূচি সম্পর্কে ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ প্রথম নিবন্ধ লেখেন এবং তা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। তিনি হলেন তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবী স্বপ্নসাধক নামে খ্যাত বিজয় বাংলা কি-বোর্ডের প্রবর্তক, আনন্দ প্রিন্টার্স এবং আনন্দ মুদ্রায়ণের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি মোস্তফা জব্বার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার চর চারতলা গ্রামের নানার বাড়ীতে ১৯৪৯ সালের ১২ই আগষ্ট জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পৈতৃক নিবাস নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরী থানার কৃষ্ণপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আব্দুল জব্বার তালুকদার ও মায়ের নাম রাবেয়া খাতুন। তিনি ৫ ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়।

তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবী স্বপ্নসাধক মোস্তফা জব্বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এবং ওই সময়ই তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের পাশাপাশি মুজিব বাহিনীর খালিয়াজুরি থানার সহ-অধিনায়ক এর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

প্রযুক্তিবিদ স্টিভ জবস এর মতো মোস্তফা জব্বারের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে। সেই সময়ে তিনি সাপ্তাহিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় রিপোর্টার হিসাবে কাজে যোগদান করেন। এবং প্রকাশিত পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি তথপ্রযুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখা, বিজয় বাংলা কী-বোর্ড ও সফটওয়্যার আবিষ্কার করার জন্য গুণীজন সম্মাননাসহ ২০টি পুরষ্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও তার রয়েছে অসংখ্য শুভেচ্ছা সম্মাননা।

তিনি তথ্যপ্রযুক্তি জগতের কিংবদন্তী হিসাবে পরিচিত হলেও তাঁর কর্মকান্ড কেবল এই জগতেই সীমিত নয়, বরং নিজগ্রামসহ দেশব্যাপী সাধারণ শিক্ষার প্রসার ও শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাপারে কম্পিউটার বিষয়ক পত্রিকাসমূহে ব্যাপকভাবে লেখালেখি এবং রাজনীতি, সাহিত্যচর্চা, সাংবাদিকতা, নাট্য আব্দোলনের মাঝে ব্যাপকভাবে জড়িত ছিলেন।

তাঁর লেখা “কম্পিউটার ও ইনফরমেশন টেকনোলজি” এবং “একাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম” স্নাতক পর্যায়ের পাঠ্য বই। এছাড়াও এক নদী রক্ত, নক্ষত্রের অঙ্গার, সুবর্ণে শেকড়, কম্পিউটার কথকতা, ডিজিটাল বাংলা, একুশ শতকের বাংলা, বাঙ্গালী ও বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং একাত্তর ও আমার যুদ্ধ তার লেখা বইগুলোর অন্যতম।

কথায় আছে, ‘কথার নাম লতা, লতায় আছে পাতা, পাতার উল্টো পিঠে আবার কথা, নিজে নিজে বললে হবেন, পাগল যা তা! পেটের ভাত হজম করতে দরকার যেমন টক দই তেমনি মনের খোরাকের হজমি টকশো। সুতরাং এটিকে সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘কম্পিউটার’ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ টক শো-এর মাধ্যমে তিনি কম্পিউটার প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করে চলেছেন।

এছাড়াও এটিএন বাংলার ‘কম্পিউটার প্রযুক্তি’ এবং চ্যানেল আই এর ‘একুশ শতক’ অনুষ্ঠানের সহায়তায় ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমেও তিনি কম্পিউটারকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেন। যা তাঁকে (সংসদ সদস্য না হয়েও টেকনোক্র্যাট কোটায়) বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর আসন এঁনে দিয়েছেন। আর এই দায়িত্ব পালনে ১০০ দিনের মহা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তিনি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনিমার্ণে তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবে রুপ ধারণের মাধ্যমে ঘরে ঘরে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া পৌঁছে দিতে বদ্ধ পরিকর।

লেখক : মুনসুর রহমান, সিনিয়র রিপোর্টার, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো।